জহিরুল ইসলাম, চকরিয়া :::
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীর উপর ৫৭ বছর আগে নির্মিত গার্ড়ার ব্রীজটি বর্তমানে চরম হুমকির সম্মূখীন। যে কোন মুহুর্তে ব্রীজটি ধ্বসে পড়ে কক্সবাজারের ৮ উপজেরা ও পাশ্চবর্তী বান্দরবানের ৩ উপজেলাসহ সারা দেশের সাথে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ আশংকা ১১ উপজেলায় বসবাসরত অর্ধকোটি জনগনের। বর্তমানে কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের চকরিয়া সড়ক উপবিভাগের চিরিঙ্গা সেকশনের পক্ষ থেকে ব্রীজের নীচে পিলার হিসাবে বালির বস্তা দিয়ে চতুর্দিকে দেয়াল দিয়ে ব্রীজটি ধ্বসে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করার নামেমাত্র ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় ও সচেতন অভিজ্ঞ মহলের মতে, যে ব্রীজের উপর দিয়ে ভারী মাল বোঝাই ও যাত্রীবাহি দৈনিক হাজার হাজার গাড়ি যাতায়ত করে সে ব্রীজের নীচে অস্থায়ী পিলার হিসাবে বালির বস্তা বসিয়ে ব্রীজটি রক্ষা করার আদৌও সম্ভব কিনা তা নিয়ে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৬০ সালে ৩১০মিটার দৈর্ঘ্য ও ৬.৮ মিটার প্রস্থ ৬টি পিলার ও ৭টি স্পেন এর উপর নির্মিত এ ব্রীজটির বর্তমান বয়স ৫৭ বছর। নির্মাণকালে ব্রীজটির স্থায়ীত্ব ধরা হয়েছিল আনুমানিক ১শত বছর। কিন্তু দেশের সর্ব দক্ষিণ প্রান্তের বিশে^র দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত পর্যটন শহর কক্সবাজার হওয়ায় এখানে স্বাভাবিক যাতায়তের গাড়ির চেয়ে পর্যটন মৌসুমে তৎকালিন পরিসংখ্যানের চাইতে আরো লাখ লাখ পর্যটকবাহি গাড়ি যাতায়ত করায় তার আগেই ব্রিজটির বিভিন্ন স্থান ভেঙে পড়ে ও নিচু হয়ে যায়। ফাটলও ধরেছে কয়েকটি স্থানে। ব্রিজের ঠিক মাঝখানে বড় ধরনের গর্ত হওয়ায় পাটাতনের মাধ্যমে জোড়াতালি দিয়ে যানবাহন চালু রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এতে কোনও যাত্রী ও পণ্যবাহী গাড়ি ব্রিজে উঠলেই কেঁপে উঠায়, আতঙ্ক শুরু হয় যাত্রীদের মধ্যে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় এভাবেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করছে লাখো মানুষ। এসব সমস্যার পাশাপাশি সম্প্রতি সেতুর পিলারও নিচু হয়ে যাওয়া ও ফাটল ধরায় বালির বস্তার ঠেস দিয়ে রাখতে হয়েছে।
সওজ এর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রায় চার বছর আগে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার মাতামুহুরী সেতুর মাঝখানের ঢালাইয়ের একটি অংশে সামান্য নিচু হয়ে যায়। ওই সময় ভারী বৃষ্টিতে একটু একটু করে বড় অংশ নিচু হয়ে যায়। নিচু হওয়া ক্ষতস্থানে লোহার পাটাতন দিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। কিন্তু সেই পাটাতন অপেক্ষাকৃত একটু উচুঁতে স্থাপন করতে হওয়ায় ২০১৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে পর্যটকবাহী একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারালে পাশের রেলিং ভেঙে মাতামুহুরী ব্রিজের নিচে নদীর চরে পড়ে যায় এতে নিহত হন ১৮ জন। এরপর সড়ক ও জনপথ বিভাগ ভেঙে যাওয়া রেলিং মেরামত এবং নিচু হয়ে যাওয়া অংশ আবারও রিপিয়ারিং করে যানবাহন চলাচল নির্বিঘœ করার চেষ্টা করে। এভাবেই ঝুঁকির মধ্যেই এতদিন ধরে যানবাহন চলাচল করে আসছে।
চকরিয়া উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু এহেছান মোহাম্মদ আজিজুল মোস্তফা বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ নতুন ভাবে চট্রগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের উপর ৪টি ব্রীজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মাতামুহুরী ব্রীজও রয়েছে। ইতিমধ্যে ব্রীজের ডিজাইনের কাজও সমাপ্তির পথে। একনেকের বৈঠকে বাজেট নির্ধারণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ব্রীজের পরবর্তী কাজ মন্ত্রনালয়ে সিদ্ধান্ত মতে কাজ শুরু হওয়ার সম্বাবনা রয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম জানন, মাতামুহুরী ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে বলেন, মাতামুহুরী ব্রীজের উপর দিয়ে ‘জোড়াতালি দিয়ে যান চলাচল করছে। সওজের পক্ষ থেকে আমাকে বিষয়টি মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের ওসিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যাতে করে মাতামুহুরী ব্রিজ দিয়ে ১০ টনের অধিক পণ্য বোঝাই যানবাহন চলাচল না করে। বিষয়টি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় উত্থাপন করা হয়েছে।’ কিন্তু এর পরও প্রতিদিন ১০টনের অধিক পণ্যবোঝাই অসংখ্য গাড়ি যাতায়ত অব্যাহত রয়েছে।
কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রানাপ্রিয় বড়ুয়া বলেন, ‘শুধু মাতামুহুরী ব্রিজ নয়। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সাঙ্গু, ইন্দ্রপুল ও বরগুনি সেতুও। এসব ব্রিজ পুনঃনির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব ব্রিজ চারলেন বিশিষ্ট করা হবে। লোড ক্যাপাসিটির অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই যানবাহন চলাচলের কারণে মেয়াদের আগেই সেতুগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চারটি সেতু নির্মাণ করতে ৩৬০ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে সংশ্রিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে। জাপানি সংস্থা জাইকা ও বাংলাদেশ সরকার যৌথ উদ্যোগে এ চারটি সেতু নির্মাণ করার সম্মতি দিয়েছে। সেতুগুলোর মধ্যে মাতামুহুরী ও সাঙ্গু ৩৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ইন্দ্রপুল ও বরগুনি সেতু দু’টি হবে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের। ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ মাতামুহুরী সেতু নির্মাণের জন্য মাটি পরীক্ষা ও ডিজাইনের শেষ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, রামু, কক্সবাজার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, উখিয়া, টেকনাফ ও পাশ্চবর্তী বান্দরবান জেলার লামা-আলীকদম উপজেলায় বসবাসরত অর্ধকোটি মানুষ জরুরী ভিত্তিতে মাতামুহুরী নদীতে একটি বিকল্প সেতু নির্মাণের জন্য প্রধান মন্ত্রীর তড়িৎ হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
প্রকাশ:
২০১৭-০৭-০৯ ১৪:২২:২১
আপডেট:২০১৭-০৭-০৯ ১৪:২২:২১
- দুর্নীতির আখড়ায় কক্সবাজার সিটি কলেজ
- চকরিয়ায় ব্যবসায়ীকে ঢেকে নিয়ে হত্যার ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা ছিনতাই
- বদরখালী সমিতির ১১টি মৎস্য প্রকল্পের নিলাম নিয়ে বিরোধ
- রামুতে আপন ভাতিজিকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি
- রামুতে ল্যাপটপ পেলেন ৮০ নারী ফ্রিল্যান্সার
- চকরিয়ায় আওয়ামিললীগ ক্যাডার নজরুল সিণ্ডিকেটের দখলে ৩০ একর বনভুমি:
- চকরিয়ায় শিক্ষা ক্যাডার মনিরুল আলমকে ঘুষের বদলেগণপিটুনি
- চকরিয়ার বিষফোঁড়া সিএনজি-টমটম স্টেশন
- কুতুবদিয়ায় গর্তে ১০ লক্ষ মণ পুরাতন লবন,লোকসানের শংকা চাষীরা
- চকরিয়া আসছেন চরমোনাই পীর মুফতি রেজাউল করিম
- চকরিয়ায় দুই বেকারি-সহ ম্যানেজারদেরকে এক লাখ টাকা জরিমানা
- চকরিয়া সদরের বক্স রোড সম্প্রসারণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ
- বহিরাগতদের নিয়ে কলেজে গেলেন পদত্যাগ করা বিতর্কিত অধ্যক্ষ মুজিবুল আলম
- চকরয়ার ঠিকাদার মিজান গ্রেফতার, কোটি টাকার ঋণের জেল-জরিমানার দায়ে
- কক্সবাজার আবাসিক হোটেলে ৭০ ইউপি সদস্যের ‘গোপন বৈঠক’, আটক ১৯
- চকরিয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, ২টি ডাম্পার ও স্কেভেটর জব্দ
- চকরিয়ার রশিদ আহমদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় : কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে
- ঈদগাঁও’র নবাগত ইউএনও বিমল চাকমা
- চকরিয়ার সাবেক এমপি জাফর আলম, সালাহউদ্দিনসহ আওয়ামী লীগের ৭৩৬ জন আসামী
- উত্তপ্ত রামু সরকারি কলেজ: অধ্যক্ষ মুজিবের অপসারনের দাবিতে কার্যালয় ও প্রশাসনিক ভবনে তালা
- কুতুবদিয়ায় গর্তে ১০ লক্ষ মণ পুরাতন লবন,লোকসানের শংকা চাষীরা
- রামুতে ট্রেনে কাটা পড়ে মোটর সাইকেল আরোহী দুই যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু
পাঠকের মতামত: